সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে ভাষণ দিয়েছেন, এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে তিনি পদত্যাগ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন, এমন দাবিও করা হয় পোস্টগুলোর শিরোনামে।
তবে তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়, এটি সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালীন গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের একটি ভিডিওর সঙ্গে ভারতের পুরোনো ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার দুটি ভিডিওর ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে এতে আলোচিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে, ‘তোমরা রাজাকার, তোমার বাবা রাজাকার এটা তো তোমরাই করেছ। চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেছি রাজাকার। আরে রাজাকার আমি তো তোমাদের বলিনাই, তোমরা নিজেরা স্লোগান দিয়ে তোমাদের রাজাকার বলেছ’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ফুটেজের পাশাপাশি দর্শকদের আরেকটি ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়।
পরে অনুসন্ধানে দেশের একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই ‘ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার রামপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আন্দোলনকারীদের আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিওটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে তার কথা বলার সময় ধারণ করা।
এ ছাড়া প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আন্দোলনকারীদের আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান শেখ হাসিনা। ওই ভিডিওটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তার কথা বলার সময় ধারণ করা।
অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার ভারত থেকে ভাষণ দেওয়ার নয়।
এদিকে আলোচিত ভিডিওতে থাকা নরেন্দ্র মোদির ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের একটি গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৭ জুনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে আলোচিত ভিডিওর নরেন্দ্র মোদির ফুটেজের সঙ্গে ওই ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সংসদীয় দলের বৈঠকের ভিডিও। যেখানে জোট দলগুলোকে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ ওই ভিডিওর সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো সম্পর্ক নেই।
সর্বশেষ অনুসন্ধানে নরেন্দ্র মোদির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ওই ভিডিওর বেশ কিছু অংশের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর বিভিন্ন ফুটেজের মিল পাওয়া যায়। ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয়াদিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যাসেম্বলি উদ্বোধন করার ভিডিও।
অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে ভাষণ দিচ্ছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার।
Viral News BD Most Popular Bangla News & Entertainment.