হাসিনা কি বর্তমানে ভারতে গৃহবন্দী, যা জানা গেল গেল (ভিডিও সহ)

এক সময় যার এক ডাকে উঠতো সভা, শাসকের আসনে যিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, আজ তার জন্য সব পথ বন্ধ। তিনি বন্দি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। অনুমতি ছাড়া কোথাও যাওয়ার উপায় নেই, কথিত নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আটকে আছেন। একসময় যারা তার নামে শ্লোগান দিতো, আজ তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছিটকে পড়ে এখন তিনি কেবল আলোচনার বিষয়, কিন্তু সম্মানের নয়-তামাশার।

পদ্মার পাড়ে তার জন্য আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ঘৃণা, জনরোষ আর বিচারের দাবি এখন তার পরিচয়ের মূল অংশ। রাজনীতির সেই দুঃসময়ের ইতিহাস এখনো রয়ে গেছে-হাজারো হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের হিসাব কেউ ভুলে যায়নি। তাই সাধারণ মানুষ চান, তিনি ফিরে আসুন এবং বিচারের মুখোমুখি হোন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে-তিনি ফিরতে চাইলেও কেউ তাকে স্বাগত জানাতে রাজি নয়।

গঙ্গার পাড়ে যারা তাকে ঠাঁই দিয়েছিল, তারাও আজ সন্দিহান। তাকে রাখা হবে নাকি ফেরত পাঠানো হবে-এই প্রশ্নের উত্তর নেই। ভারতের অবস্থানও অস্বচ্ছ। আপাকে নিয়ে তাদের দ্বিধা স্পষ্ট, যেন এক কঠিন রাজনৈতিক বোঝা হয়ে উঠেছেন তিনি। বিশ্ব কূটনীতিতেও তিনি এখন অনাহূত, কোথাও কোনো সমর্থন নেই।

যারা একসময় “আপা” বলে মাথার উপরে রেখেছিল, তার নির্দেশ ছাড়া কিছু করত না, তারাই এখন তার নাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কেউ চাইছে না সেই পুরোনো অধ্যায় আবার ফিরে আসুক। একসময় যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হতে পারতেন না, তাদেরই এখন লাইভে এসে বক্তব্য দিতে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করতে হচ্ছে। কিন্তু তার সেই হুমকিগুলোকেও আর কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। হুমকির ভাষা আর ভয় দেখানোর চেষ্টা এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। চায়ের দোকান, ক্যাম্পাস, অফিস-সব জায়গায় তিনি এখন কৌতুকের বিষয়বস্তু। তার পুরনো শক্তি, ভয় ধরানো ক্ষমতা-সবকিছু এখন অতীত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, তিনি দেশে ফিরতে চান। পরিকল্পনা একটাই-ফিরেই প্রতিপক্ষকে দমন করবেন, কারাগারে পাঠাবেন, শাসনের কঠোর রূপ দেখাবেন। উন্নয়নের নতুন অধ্যায় লেখার কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে ব্যঙ্গ চলছে। কেউ বলছেন, তিনি এখনো মেট্রোরেল আর পদ্মা সেতুর মায়া ভুলতে পারেননি!

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতা কঠিন। হাজারো হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচার এখনো বাকি। এই বিচার না হলে ইতিহাস অসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও তাকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে এবং ভারতকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

তবে ভারত কেন দেরি করছে,এটাই এখন মূল প্রশ্ন। দিল্লি কেন তাকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে না? কূটনৈতিক জটিলতা কোথায়? অনেকে সন্দেহ করছেন, তবে কি তাকে ভারতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়েছে? গৃহবন্দী?

বাংলাদেশ সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তার অপরাধের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।

এদিকে ভারতীয় জনমতও বদলাচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৫% ভারতীয় চান তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। মাত্র ১৬-১৭% মানুষ তাকে ভারতে রাখতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থান ভবিষ্যতে আরও বদলাতে পারে, এবং তার ফেরা অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়-তিনি কি সত্যিই ফিরে আসতে পারবেন? নাকি ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ে হারিয়ে যাবেন?

Edit