প্রথমবারের হাজির ওবায়দুল কাদের, দিলেন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশ ছাড়ার জন্য মাত্র ৪৫ মিনিট সময় পেয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তড়িঘড়ি করে হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়তে হয় তাকে। এরপর থেকেই হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

অবশেষে জুলাই অভ্যুত্থানের নয় মাস পর জানা গেল ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন ওবায়দুল কাদের? কি ঘটেছিল তার সাথে? সেই ৫ আগস্টের পর প্রথমবারের মতো ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দা ওয়ালের মুখোমুখি হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের বহু প্রশ্নের উত্তর। জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।

লুকিয়ে থাকার ঘটনা বর্ণনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেই সময় তিনি খুবই ভাগ্যবান। সেদিন তার বেঁচে থাকার কথাই ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলেন বলেও স্বীকার করেন তিনি। বলেন, ৫ আগস্ট তিনি অবস্থান করছিলেন তার সংসদীয় এলাকায়। তবে প্রাণভয়ে বাড়িতে অবস্থান করতে পারেননি তিনি। ছিলেন পাশের একটি বাসায়।

জানান, ‌চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। এটা আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রীর গণভবন কেন্দ্রিক। আমরা অবাক হলাম যে সংসদ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, আমি যে বাসাটায় ছিলাম আন্দোলনকারীরা সেই বাসাতেও হামলা করে। তারা জানতো না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা লুটপাট করেছে। কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেখানে হামলা করবে। আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। তারপরেও সাত থেকে আট জন ছেলে ঢুকে পড়ে খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, হঠাৎ তারা তার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে নেত্রী চলে গেল আপনি যাননি কেন? আমি কিছু বলছিলাম। তাদের মধ্যে কি উদয় হলো আমি জানি না। তারা আমাকে বলে আপনার ছবি তুলবো। তারপর ছবি তুলতে শুরু করল। সেলফি নিচ্ছিল। এই ছাত্রদের অনেকে হয়ত আমাকে চিনত। কি কারণে যে আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ছিল সেটা নিমিষেই শীতল হয়ে গেল। তখন ঠান্ডা মেজাজি কথা বলছিল। এদের মধ্যে এক পর্যায়ে একটা গ্রুপ চেয়েছিল আমাকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। কেউ কেউ আবার এটাও চেয়েছিল যে জনতার হাতে তুলে দিতে।

এ সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। এরপর কালো একটা মাস্ক মুখে দিয়ে তাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তায় নিয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে। একটা ইজি বাইক। সেটা খালি ছিল। হঠাৎ করে কেন যেন এসে পড়লো। হয়ত আমার ভাগ্য। এরা দুজনে আমাকে ও আমার ওয়াইফকে নিয়ে অটোতে উঠলো। আর বলতে লাগলো পথে তো অসংখ্য মানুষ। চেকআপ সব জায়গায়। বলতে লাগলো আমাদের চাচা চাচি অসুস্থ হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবেন না। এই করে করে নিয়ে গেল অনেক দূর একটা জায়গায়। এটা ভাবতেও পারেনি যে ওরা বাথরুমে ঢুকলো। সে বেঁচে থাকাটা সেদিন পরম সৌভাগ্যের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন আনএক্সপেক্টেডলি বেঁচে গেছি। দিস ইজ দা ইম্পরটেন্ট।

এরপর তারা কেন ছেড়ে দিল? কোথায় নিয়ে গেল? সেই সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছেলেরা যেকোনোভাবে আমাদেরকে আর্মির হাতে তুলে দিতে পারতো। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ সেখানে অনেকেই তো আছে আমাদের অপোজিশন। মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু কেন তারা এমন করল তা নিয়েও আন্দাজ করতে পারেনি।

এর পর কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বাংলাদেশেই ছিলাম তিন মাসের মতো। আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল ওখান থেকে কিছু করা যায় কিনা। কিছু একটা করা যায় কিনা, সংঘটিত করা যায় কিনা, এর মধ্যে একে একে সবাই গ্রেপ্তার হতে শুরু করলে তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান।