সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় কারা ফটকে অপেক্ষমাণ নেত্রকোনা থেকে আসা তাঁর সমর্থক ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের জামিননামার কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছায়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বেলা দুইটার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আদালত ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে লুৎফুজ্জামান বাবরের চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা থেকে উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়ার চিঠি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসে। তার আগে গত ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা থেকে তিনি খালাস পান। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় আট বছরের দণ্ড থেকে এবং ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান বাবর। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আটটি মামলা থেকে ইতিমধ্যে তিনি জামিন পেয়েছেন। কারাগারের অন্যান্য কার্যক্রম শেষে বেলা দুইটার দিকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান জব্দ করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় একই আসামিদের।
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না, সাজা কমল যাঁদের
এদিকে লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তির খবরে নেত্রকোনা থেকে তাঁর সমর্থকেরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ভিড় করেন। পরে বাবর কারাগার থেকে মুক্তি পেলে তাঁরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফুল মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমাদের নেতা বাবরকে মুক্তি দেওয়া হবে। তাই আজ ভোরে নেত্রকোনা থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় এসেছি। মুক্তি দেওয়া হলে আমরা তাঁকে বরণ করে নেব।’
একই উপজেলার মহিলা দলের নেত্রী কল্পনা বেগম বলেন, ‘বাবর সাহেবের মুক্তির জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আজ তাঁকে মুক্তি দেওয়ায় আমরা অনেক খুশি।’
আজ সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি থেকে বাবরের কয়েক শ সমর্থক এবং বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাস ও মাইক্রোবাস নিয়ে কারাগারের সামনে আসেন। তাঁরা ফুলের মালা নিয়ে কারা ফটকে অবস্থান নিয়ে বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় থাকেন। দুপুর দুইটার দিকে বাবর কারাগার থেকে বের হোন। এরপর ছাদখোলা প্রাইভেট কার থেকে তাঁর সমর্থক ও কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
নেত্রকোনা মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক মিয়া বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁদের নেতা বাবরকে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী করে রাখেন। আজ তাঁর কারামুক্তির খবর পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে বাসে কেরানীগঞ্জে রওনা দেন। ভোরে কারাগার এলাকায় পৌঁছান। এরপর বাবরের মুক্তি অপেক্ষায় থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলে তাঁরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
লুৎফুজ্জামান বাবরের শ্যালক সাদাত রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ প্রশস্ত হলো।
Viral News BD Most Popular Bangla News & Entertainment.