জুলাই অভ্যুত্থানে পতনের পরও থেমে নেই আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত দলটি। ফেব্রুয়ারি মাসে হরতাল অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। এ ব্যাপারে ১৪ দলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে গোপনে আলোচনা চলছে। দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে এসব কথা জানালেন দলটির পলাতক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম।
গণহত্যার দায় মাথায় নিয়ে বেশিরভাগ নেতা কর্মী পালিয়ে থাকায় সরকারবিরোধী এই কর্মসূচি কীভাবে সফল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করেন নাসিম। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তাতে তিনি অপারগতা জানান।
জুলাইয়ের ছাত্রজনতার আন্দোলন দমনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুগত সদস্যরা। প্রাণ হারান প্রায় দুই হাজার ছাত্রজনতা। আহত হন হাজার হাজার মানুষ। দেড় দশকের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, গুম, খুন আর নানা অপকর্মের পর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দলটির বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য নেতা কর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। যারা দেশের ভেতরে আছেন তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এখনো গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতা কর্মীরা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। চৌদ্দ দলের নেতাদেরও নেই কোনো হদিস। এমন বাস্তবতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে দলটি।
এ বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা কর্মসূচি তৈরি করেছি, আলাপ আলোচনার জন্য। দল সহ অন্যান্য জেলায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার আছে। ছাত্র, যুবক, শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষ, শ্রেণি পেশা আছে। তাদের সাথে আমাদের এই কমিউনিকেশন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখেই। আগেই আমরা কর্মসূচিগুলো একে একে পালন করি এবং একপর্যায়ে আমরা সর্বাত্মক হরতালের আহ্বান জানাব দেশবাসীকে।
এ কল দিয়ে বাহাউদ্দিন নাসিম দাবি করেন, আওয়ামী লীগের যুগ ছিল দেশের স্বর্ণযুগ। বর্তমানে দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে বলে মনে করেন দলটির পলাতক এই নেতা। তবে পালিয়ে থাকা নেতা কর্মীরা কীভাবে আন্দোলন সফল করবে সেই প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে।
যে কর্মসূচি নিয়ে আসবেন তো মাঠে তো কর্মীদেরকে থাকতে হবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে। সেটি কীভাবে করবেন প্রশ্নের জবাবে নাসিব বলেন,জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। জনগণের অংশগ্রহণেই হবে।
গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার উপর চালানো হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে নাসিম আরো বলেন, কীভাবে এদেরকে হত্যা হয়েছে তার জন্য তো তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তো আন্তর্জাতিকভাবে আসার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা করেছিলেন তাদেরকে সহযোগিতা করার কথা। আসার জন্য সব কাজই তো সম্পন্ন করার পরও। এমনকি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করা হয়েছে সেগুলোকে কারা বাদ দিয়েছে? কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে দম্ভোক্তি করেন এই নেতা। তবে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হবেন কি না সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনকার যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি থেকে উনি ফিরে আসবেন?
জবাবে নাসিম বলেন, গরিব মানুষের, কর্মজীবী মানুষের, তৃণমূলের, মানুষের, কৃষক স্বার্থ আজকে সংরক্ষিত হচ্ছে। এরাই দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মর্যাদার সাথে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
এই মুহূর্তে তিনি দেশে নাকি দেশের বাইরে আছেন জানতে চাইলে এভাবেই তার জবাব দেন।আমরা আত্মগোপনে আছি। সেই পাঁচ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে নিধন, হত্যা, গণগ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, শত শত মামলা। আমার বিপক্ষে কতগুলো মামলা দেওয়া হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আবারও একদিন ফিরে আসবে বলে দাবি করেন সাবেক এই এমপি।