ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প, পলকেই ধসে যায় আস্ত শহর

গত ৮ জানুয়ারি সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে তিব্বতের ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল গোটা তিব্বত।

মাউন্ট এভারেস্ট থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে তিংরি এলাকায়, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই কম্পনের উৎসস্থল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিকদের মতে, রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.১। জনবসতি কম থাকায় এই ভূমিকম্পে প্রাণহানি তেমন ঘটেনি। তবে গত ২৫ বছরের ইতিহাসে এমন কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছিল যার ফলে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সেই দেশগুলো। কম্পনের মাত্রা তুলনা করলে প্রথমেই আসে ২০১১ সালে জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ঘটে যাওয়া ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের কথা। এর ফলে সুনামি হয়। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যান।

এই তালিকায় আছে, চীনের পূর্ব সিচুয়ানের ৭.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প। এর আঘাতে ৮৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে নেপালে ঘটে যাওয়া ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে ইন্দোনেশিয়ায়। উপরোক্ত প্রতিটি ভূমিকম্পেই প্রকৃতির নির্দয় কশাঘাত আছড়ে পড়েছে মানবজাতির ওপর।

ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় উঠেছে স্বজনহারাদের কান্নার রোল। এমনই আরও একটি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়েছিল চীন। আজ থেকে প্রায় ৪৭০ বছর আগে সেখানে নেমে আসে এক মর্মান্তিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাঁড়া।

সময়টা ছিল ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি। শীতের ভোরে কেঁপে উঠেছিল চীনের শানসি প্রদেশ। আধুনিক রিখটার স্কেল না থাকার জন্য কম্পনের মাত্রা কত ছিল তা সঠিক মাপা যায়নি। পরবর্তীতে গবেষকেরা জানিয়েছিলেন কম্পনের মাত্রা ছিল ৮ থেকে ৮.৩-এর মধ্যে।

মারাত্মক এই ভূমিকম্পকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক’ আখ্যা দেওয়ার কারণ প্রাণহানি। চীন তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেও এই রকম বিধ্বংসী ভূমিকম্প আর হয়েছে বলে জানা যায়নি। মিং সম্রাট জিয়াজিংয়ের আমলের ঘটনাটিকে ‘জিয়াজিং মহাভূমিকম্প’ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।

বর্তমানের শানসি, শানসি, হেনান এবং গানসু প্রদেশে একযোগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ওয়েই নদী উপত্যকা বলে মনে করা হয়। ভয়াবহ শব্দে ফেটে যায় মাটি, দেখা দেয় ফাটল। ফাটল থেকে গলগল করে উঠে আসতে থাকে পানি।

তখন বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল আজকের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের সমান। সেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৪০ কোটির আশপাশে। প্রলয়ঙ্ককারী ভূমিকম্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। এমনই ছিল তার অভিঘাত।

চীনা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেদিন কেবল ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের। পরে নানাভাবে বাড়ি চাপা পড়ে বা অনান্য কারণে মৃত্যুর মিছিল গিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ ৩০ হাজারে পৌঁছে ছিল। কেবল ভূমিকম্পের ফলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয়।

এই বিপর্যয়ের ফল ছিল দীর্ঘমেয়াদি। সে কারণে পরবর্তীতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ‘ইয়াওডং’ নামে গুহা গৃহগুলো। সেই সময় অনেকেই শানসি প্রদেশে গুহায় বসবাস করতেন। প্রবল কম্পনে সেগুলো তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে। পাথর চাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মৃত্যু হয় বহু মানুষের।