নয়াদিল্লির আকাশে যেন এক অদ্ভুত চাপা উত্তেজনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেবিলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনের প্রতিটি পাতা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল যেন গভীর মনোযোগে উল্টে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছেন।
প্রতিবেদনের প্রতিটি পাতায় একটি নাম বারবার ফিরে আসছে—বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট এই দেশটি যে একদিন ভারতের জন্য এত বড় কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠবে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি।
বিশেষ এক সফরে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াওয়েন ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলও রয়েছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা মূল আলোচনায় যোগ দেন। ঢাকার বাতাসে তখন সামরিক কৌশল ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে গুঞ্জন চলছিল।
এই আলোচনাগুলো শুধুই সৌজন্যমূলক নয়, বরং বাস্তব অর্থে গভীর কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক হয়তো এক নতুন ভূরাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা—যেটা ঘটছে নীরবে।
বাংলাদেশ-চীন সামরিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ তার মোট অস্ত্র আমদানির ৭২ শতাংশই চীন থেকে নিয়েছে—যা পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর ফলে বাংলাদেশ এখন চীনের অস্ত্র রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ-চীনের সামরিক সম্পর্ক এখন আর কেবল অস্ত্র কেনাবেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
সাম্প্রতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ শুধু চীনা অস্ত্র আমদানি করছে না, বরং চীনের কাছ থেকে সামরিক প্রযুক্তিও পাচ্ছে। এখানেই সবচেয়ে বড় পার্থক্য।
অস্ত্র আমদানি একটি বিষয়, কিন্তু প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলগত মাত্রা যোগ করে। চীনের কাছ থেকে সামরিক প্রযুক্তি পেয়ে বাংলাদেশ নিজস্ব সামরিক উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আরও স্বাধীনভাবে সামরিক নীতি পরিচালনা করতে পারবে।
অস্ত্র বিক্রেতা দেশগুলো সাধারণত প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ করে। কিন্তু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে সামরিক খাতে সমৃদ্ধ করতে চীন কোনো বিনিময় শর্ত দিচ্ছে না। আর এটাই ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Ezoic
দিল্লির কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন ধরে ভারত ধরে নিয়েছিল যে দক্ষিণ এশিয়ায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য অটুট থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের দৃশ্যমান কৌশলগত অগ্রযাত্রা ভারতের নিরাপত্তা নীতিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাপ্রধান সম্প্রতি বলেছেন, “চীনের প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি আমাদের জন্য কৌশলগত হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”
পাকিস্তান ইতোমধ্যেই তার সামরিক সরঞ্জামের ৮১ শতাংশ চীন থেকে সংগ্রহ করে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এখন বাংলাদেশ যদি চীনের সহায়তায় নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন শুরু করে, তাহলে ভারতের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কারণ এতে ভারতের উত্তর ও পূর্ব সীমান্তে চীনের মিত্রবাহিনী তৈরি হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি ভারতকে তার প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় নতুন করে হিসাব কষতে বাধ্য করবে।
বাংলাদেশ-চীন সামরিক সম্পর্কের এই নতুন মাত্রা দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে। ভারত যেখানে এখনো বাংলাদেশের ওপর তার প্রভাব বজায় রাখতে চায়, সেখানে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতা নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা তৈরি করতে পারে।
এই পরিবর্তন ভারতকে নতুন প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারণে বাধ্য করতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
Viral News BD Most Popular Bangla News & Entertainment.