বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত নেন কারফিউ বলবৎ রাখতে সেনারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাবেন না। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন—এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরদিন সকালে শেখ হাসিনার সরকারি আবাস গণভবনে যান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, তিনি দেশজুড়ে যে কারফিউ ডেকেছেন, তা বাস্তবায়নে তার সেনারা অপারগ। বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে, এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না।
ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার অনলাইন বৈঠকের বিশদ বিবরণ এবং শেখ হাসিনার কাছে দেয়া বার্তা আগে প্রকাশিত হয়নি। ওই বৈঠক আর বার্তায় ফুটে উঠেছিল, তিনি সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন। এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে তিনি ভিন্নমত খুব কমই সহ্য করেছেন। গত সোমবার তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার এমন বিশৃঙ্খল শাসনকাল আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল।
গত রোববার দেশব্যাপী সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হওয়ার পরে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল এটি। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রোববার সন্ধ্যার আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি একে যেকোনো বিশৃঙ্খলার পর হালনাগাদ তথ্য নিতে নিয়মিত বৈঠক হিসেবে বর্ণনা করেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আরও প্রশ্ন করলে তিনি বিস্তারিত জানাননি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি বোঝার জন্য গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং এসব ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন এমন দুটি সূত্রসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করেছেন। হাজারো বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর গত জানুয়ারিতে তিনি চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা বর্জন করেছিল।
শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেননি ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বাংলাদেশের তিন সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ার কারণে যেকোনো মূল্যে হাসিনাকে সমর্থন করা যায় না।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। সেটিই সম্ভবত সেনাবাহিনীর প্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, সেনারা বাইরে আছেন। কী ঘটছে, তা তারা দেখছেন।
ওয়াকার-উজ-জামান বৈবাহিক সূত্রে হাসিনার আত্মীয়। তিনি গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার সমর্থন নড়বড়ে হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছিলেন। সেদিন তিনি একটি অলংকৃত কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন। সেদিন সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভায় শতাধিক উর্দিধারী সেনা কর্মকর্তার সামনে বক্তৃতা করেছিলেন। সেনাবাহিনী পরে এই আলোচনার কিছু বিবরণ প্রকাশ্যে আনে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন, জীবন রক্ষা করতে হবে। তিনি কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। এটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সহিংস বিক্ষোভ দমন করবে না, যা হাসিনাকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা গত সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানও ছিলেন। শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বাধা দেয়নি। তিনি যা অঙ্গীকার করেছিলেন, সেনাবাহিনী তা করেছে।’
 Viral News BD Most Popular Bangla News & Entertainment.
Viral News BD Most Popular Bangla News & Entertainment.
				 
						
					 
						
					 
						
					 
						
					 
						
					