ফাঁস হয়ে গেল ইউনূস-মোদি বৈঠক নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ব্যাংকক, বিমসটেক সম্মেলন – বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের পটভূমিতে এই বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কে টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপট গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রকট হয়ে ওঠে। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে রাজনৈতিক বিবৃতি ও সাধারণ মানুষের মনেও ভারত-বিরোধী মনোভাব দেখা যায়। তবে ইউনূস-মোদি বৈঠককে বিশ্লেষকরা দুই দেশের মাঝে এক নতুন বোঝাপড়ার সূচনা হিসেবে দেখছেন। যদিও বৈঠকে কিছু স্পর্শকাতর ইস্যু উঠে এসেছে, যেগুলো নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান ছিল ভিন্ন।

বৈঠকের বার্তা ও প্রতিক্রিয়া ঢাকা ও দিল্লি—উভয় পক্ষই বৈঠকের বিষয়ে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশ চেয়েছে পুরোনো বন্ধুত্বকে নতুন করে গড়ে তুলতে, আর ভারতও নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের কূটনৈতিক কৌশল কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। কারণ ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক মূলত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিবিড় ছিল।

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “বাংলাদেশ এখন নতুন বাস্তবতায় নতুন আঙ্গিকে পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টায় পারস্পরিক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ।”

সংবেদনশীল ইস্যু ও ভবিষ্যতের পথ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করেছেন। শেখ হাসিনার ভারত থেকে বাংলাদেশবিরোধী মন্তব্য এবং রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়েও মোদির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানায় উপদেষ্টার দপ্তর। এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ভারতের জিন্দাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ আইনি ও রাজনৈতিকভাবে জটিল একটি বিষয়। তিনি ভারতে বন্ধু হিসেবে স্বাগত। তাই এটি বাস্তবায়ন সহজ নয়।”

তবে তিনি আরও বলেন, “সংখ্যালঘু ইস্যু বা প্রত্যর্পণ—এসব মতপার্থক্য সত্ত্বেও দুই দেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংককের এই বৈঠক হয়তো বড় কোনো চুক্তি না এনেছে, কিন্তু নতুন এক ‘ওয়ার্কিং রিলেশন’ বা কার্যকর সম্পর্কের সূচনা করেছে। পুরোনো অস্বস্তি ভুলে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে ইউনূস-মোদি সাক্ষাৎ।