সিরাজগঞ্জে ‘ব্যক্তিগত আয়নাঘর’, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বের হলেন নারী ও বৃদ্ধ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় একটি ‘ব্যক্তিগত আয়নাঘর’র সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে পাঁচ মাস বন্দি থাকার পর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এক নারী ও এক বৃদ্ধ মুক্ত হয়েছেন।

এখানে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে চাঁদা আদায়, কিডনি বিক্রি ও জমি লিখে নেওয়াসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হত বলে অভিযোগ ফিরে আসাদের।

শুক্রবার সকালে উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামে ‘আয়নাঘর’র সন্ধান পাওয়ার খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় করেন। খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান।

এ ঘটনার জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানান রায়গঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান।

উদ্ধার হওয়ারা হলেন- উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের প্রয়াত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল জুব্বার (৭৫) এবং লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪৮)। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে তারা মুক্ত হয়ে বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের ঘটনার বর্ণনা দেন।

আটক নাজমুল হোসেন আরাফাত (৪৫) উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে। তিনি পল্লী চিকিৎসকের পাশাপাশি সংবাদিকতা করেন। এ ঘটনা পর তাকে রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বন্দিদশা থেকে ফেরা শিল্পী বেগম বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রায় ছয় মাস আগে আমাকে অপহরণ করা হয়। এক মাস অন্যত্র রাখা হলেও পাঁচ মাস ধরে এই ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। মাঝে মধ্যে শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হত।”

তার সঙ্গে সেখানে আব্দুল জুব্বার নামে আরও একজন বন্দি ছিলেন বলে জানান তিনি।

পল্লী চিকিৎসক আরাফাতের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন তাদের ওই ঘরে বন্দি করে রেখেছিল বলে দাবি শিল্পী বেগমের।

বৃহস্পতিবার রাত সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার পর আব্দুল জুব্বার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের ৮ নভেম্বর বিকালে বাবা নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।

“বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাবা ওই ঘর থেকে কৌশলে বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

স্থানীয়রা জানান, ওই ভবনের মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন সেখ। তার কাছ থেকে আরাফাত ভাড়া নিয়ে ভবনের নিচের ফ্লোরে ৩ থেকে ৪টি ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করেন। তিনি ও তার কিছু লোকজন গভীর রাতে এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা সুমন ও আরাফাতের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। খবর পেয়ে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ারা নিখোঁজ হওয়ার পরপর থানায় জিডি করেছিলেন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।